“ফিরব বললে ফেরা যায় নাকি”

শহরে সেদিন বৃষ্টি হয়েছে। ভরা বর্ষা। অনেক জায়গাতে জলও জমেছে। বাড়ি ফিরছিল হীরক। জমা জলে হাঁটা এখনো বেশ ভালোই লাগে। নামলেই যেন অভিযাত্রী। তখনি প্রতীকের কথা মনে পড়ে। প্রতীক জমা জল একদম সঝ্য করতে পারত না। তবে গাঁজা খেলে আলাদা কথা। তখন তারা  utopia-র মানুষ। সবাই সুন্দর প্রভু। ক্ষমা করে দাও সব্বাইই কে । হীরকের বিস্ময় একটাই “শালা ধোঁয়া খেয়ে কি মস্তি মাইরি”। যদিও প্রতীক বানাতে গেলেই ছড়াত। ওর অদ্ভুত  sense of humor এর জন্য ওকে ওই ব্যাপার টায় ছাড় দেওয়া হয়েছিল। হীরক বানাত। তার বদলে প্রতীককে ক্রমাগত  হ্যাজাতে হবে।  quality  হ্যাজ হাওয়া চাই। 

ভাবতে ভাবতে বাড়ি এসে গেল। ভরা বর্ষায় হাল্কা একটা কনকনে ভাব। সন্ধ্যে নামছে শহরে। হীরক বাড়ি ঢুকল। মা অবিকল মুখ নিয়ে দরজা খুলল । জড় বস্তুর সাথে মায়ের তফাত একটাই। এখনো মাঝে মাঝে আফসোস করে।   

তখন   California  এ ভোর হচ্ছে। প্রায় এক বোতল  glenfiddich  শেষ। সব সফল সংসারী মানুষরা রাত ১১ টায় বাড়ি ফিরে গেছে। ঝকঝকে গাড়ি টা নিচে দেখা যাচ্ছে। কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়েছে কি ? রাতের অতিথিদের মুখ গুলো   মনে করতে ছাইল,  কিন্তু আর আলাদা করতে পারছে না প্রতীক। সবই যেন একরকম। একটাই মুখ, অনেক শরীর। সব মুখগুলো কি একটু বদলে গেল ? চেনা চেনা লাগছে ? হীরক বার বার বলত, “আর তো ২ বছর ? ” এখনো কি তাই বলছে ? প্রতীকের মাথা ঘুরছে। 

duplex  এর ওপরের তলায় বউ ঘুমচ্ছে, মেয়ে, ছেলে অন্য ঘরে। ডাকবে কি ? নাহ, দেখি কি করে মাল টা। কিচ্ছু বলছে না হীরক। একটা গান শুনতে পাচ্ছে প্রতীক। হাল্কা একটা বিষণ্ণ সুর। চিনতে পারছে। একটু একটু চিনতে পারছে। কে চালাল এই গান টা ? প্রতীক তো computer  থেকে অনেক দুরে কারপেটের ওপরে। শুয়ে পড়ল প্রতীক কারপেটের ওপরেই,  ভয়ে, নেশায় । তখন, প্রতীকের ঘর থেকে  golden gate   bridge এ শনিবারের প্রথম আলো পড়েছে। প্রতীক খালি একটা লাইন ই শুনতে পাচ্ছে বারবার ঃ “ফিরব বললে ফেরা যায় না কি, পেরিয়েছ দেশ কাল জান না কি এ সময় …” 

 ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭                                                                                                   © প্রত্যয় মুখার্জী